ইতালির প্রাচীন অস্কান ভাষায় ‘পম্পে’ শব্দের অর্থ পাঁচ। সেখান থেকেই পম্পেই শব্দের উৎপত্তি। আবার অনেকের মতো, প্রাচীন রোমের পম্পেইয়া পরিবার এখানে প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল। তার থেকেই ‘পম্পেই’ শব্দের উৎপত্তি। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছেছিল রোমান নগরী পম্পেই। রাতারাতি সেই জনপদ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ভিসুভিয়াস পর্বতের অগ্ন্যুৎপাতে। পুরু ছাইয়ের প্রলেপ এবং পিউমিস স্টোনে ঢাকা পড়েছিল শহর। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ থেকেই পম্পেই নগরীতে জনবসতির গোড়াপত্তন।
খ্রিস্টের জন্মের ৮৯ বছর আগে পম্পেই হয়ে ওঠে রোমান সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। ছোটখাটো ভূমিকম্পের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন পম্পেইর বাসিন্দারা। কিন্তু ৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াস পর্বতের অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়েছিল, তার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি কেউ। রিখটার স্কেলে ভূকম্পনের তীব্রতা ছিল ৫ থেকে ৬-এর মাঝামাঝি। সেসঙ্গে ১৩-২০ ফুট পর্যন্ত ভলক্যানিক অ্যাশ এবং পিউমিস স্টোনের প্রলেপে ঢাকা পড়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষের ঠিকানা, ১৬০-১৭০ হেক্টর ভূখণ্ডের পম্পেই নগরী। টানা দু’দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল।
অধিকাংশ পম্পেইবাসী পালাতে পারলেও বহু হতভাগার সমাধি হয় ছাইয়ের নিচে। আজ পর্যন্ত পম্পেই থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ১১৫০টি প্রস্তরীভূত কঙ্কাল। তাদের অবস্থান দেখে বোঝা যায় আচমকা বিপর্যয় ধেয়ে আসায় তারা পালানোর সুযোগ পাননি। বহু কঙ্কালের সঙ্গে পাওয়া গেছে সেই সময়কার অলঙ্কার। উদ্ধার হয়েছে প্রাচীন রোমান মুদ্রাও। পরে কঙ্কালগুলোর আধারে প্লাস্টার অব প্যারিসের সাহায্যে দেহের আকার দেওয়া হয়। ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসের খোঁজে কয়েকজন উৎসাহী এসে পৌঁছেন ইতালির কাম্পানিয়া প্রদেশে।
তারা বিস্মিত হয়ে দেখেন, ভিসুভিয়াসের লাভার ছাই আসলে সংরক্ষকের কাজ করেছে। ছাইয়ের আস্তরণে পম্পেইয়ের সব কিছু অবিকল রয়েছে ২ হাজার বছর ধরে। ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইট পম্পেইয়ের ধ্বংসাবশেষে প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটকের পা পড়ে। ইতিহাসবিদদের মতে, আধুনিক নাগরিক জীবনের সব উপকরণ মজুদ ছিল পম্পেইবাসীর জীবনে। শ্রেণিবিভাজনের ছাপও ছিল স্পষ্ট। গবেষকদের ধারণা, এই শহরবাসীর খাদ্য তালিকা ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। সাধারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাসে অলিভ, বিভিন্ন রকম বাদাম, পল, নুন দিয়ে জারিত মাছ-মাংসের প্রাধান্য ছিল। কিন্তু আসল চমক ছিল অভিজাত পম্পেইবাসীর খাদ্য তালিকায়। সেই তালিকা শাসন করত বিভিন্ন সামুদ্রিক জীব এবং জিরাফ! স্তাবিয়েসহ অন্যান্য বন্দর দিয়েই জিরাফের মাংসসহ অন্যান্য মহার্ঘ্য খাবার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমদানি করা হতো। আর ইন্দোনেশিয়া থেকে আসত বিভিন্ন মসলাপাতি।